‘সিইসি মহোদয় বিব্রত কেন? অ্যাকশন চাই’
- হাসান আমান
- ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৫২, আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:১৭
নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই সারদেশে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িতে হামলার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার( সিইসি) নুরুল হুদা বিব্রত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবের গাড়িতে হামলায় আমরা বিব্রত।
আজ বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্রিফিংকালে তিনি একথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক মূল্যবান। ৩০০ আসনের নির্বাচনের চেয়ে একটা মানুষের জীবন অনেক মূল্যবান। এই সহিংসতা ও জীবনহানি কাম্য হতে পারে না।
যাক হুদা সাহেব তাহলে জেগে আছেন। তিনি মির্জা ফখরুল সাহেবের গাড়িতে হামলার ঘটনায় বিব্রত(!)ও হয়েছেন।
আসলে নির্বাচন কমিশনের কাজটা কি? একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য যা যা করার কথা তার সব কিছুই করবে ইসি। আইনেও তাদের সে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ নেতার গাড়ি বহরে হামলা হলো আর সিইসি বিব্রত বলে তার দায়িত্ব শেষ করলেন? এটাও কি সম্ভব। তাহলে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব?
দিনের শুরুটাই বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে। নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিনেই মির্জা ফখরুল ইসলাম, মওদুদ আহমেদ ও মঈন খানের মতো শীর্ষ নেতাদের প্রচারণায় হামলা হলো, তাহলে সারাদেশে কি অবস্থা সেটা সহজেই অনুমেয়।
মিডিয়া মির্জা ফখরুল, মওদুদ আহমেদ ও মঈন খানদের সারাক্ষণ অনুসরণ করে, এরপরও তারা ক্ষমতাসীনদের হামলা থেকে রক্ষা পান না তাহলে অজপাঁড়াগায়ে, গ্রাম-গঞ্জে যেখানে মিডিয়ার উপস্থিতি নাই সেখানে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কি অবস্থা তা একটু কল্পনা করুন।
এমনিতেই সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে। ফলে বর্তমান এমপি-মন্ত্রীরা সরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা চব্বিশ ঘন্টা পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হামলা-মামলার ভয় মাথায় নিয়ে কোন রকমে নির্বাচনী এলাকায় আত্মগোপন করে না হয় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
যারা বিরোধী দলের নেতাদের প্রচারণায় ও গাড়িতে হামলার চালিয়েছে তাদেরকে অভিলম্বে গ্রেফতার করুন। আইনের আওতায় এনে বিচার করুন।
আপনি শুধু বিব্রত হবেন কেন? আপনি অ্যাকশন নিন। আপনার প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করুন।
মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), আপনি নিজের বিবেকের কাছে একটা প্রশ্ন করুন, সারা দেশে নির্বাচনের প্রচারণার যে অবস্থা চলছে সেটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপনি কি আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন? আপনি কি সংবিধানের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেছেন?
মাননীয় সিইসি, আপনি শপথ নিয়েছেন কোন প্রকার রাগ-অনুরাগের বশবতী হয়ে কারো প্রতি কোন অন্যায় করবেন না। আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য যা যা করার তাই করবেন।
দেশের সতেরো কোটি মানুষ, সাড়ে দশ কোটি ভোটার, ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক, প্রবাসী ভাই-বোনসহ সমাজের প্রতিটা শ্রেণির মানুষ আপনার ভূমিকার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে।
বিদেশীরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন। দেশে কেমন নির্বাচন হয় তার উপর তাদের বিনিয়োগ করা বা না করা অনেকটা নির্ভর করবে।
যারা জীবনে প্রথম ভোটার, যারা জীবনে প্রথম ভোট দিবে তারা যেন নির্ভয়ে, নির্ভিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার জন্য তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।
২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন যেন না হয় এজন্য আপনিসহ আপনার কমিশনের দিকে দেশ-বিদেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন। নির্বাচনের পর কোন দল ক্ষমতায় আসবে আমরা জানি না, কিন্তু আমরা চাই একটা সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন। যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
আপনার সামনে হিরো হওয়ার সুযোগ আছে আবার মীর জাফর ও ঘূণিত ব্যক্তি হওয়ারও সুযোগ আছে। কারো তাবেদারি না করে নিরপেক্ষভাবে আপনার দায়িত্ব পালন করুন। সবাইকে মাঠে খেলার সুযোগ দিন। মাঠেই যেন জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সেটা নিশ্চিত করা আপনার ও আপনাদের দায়িত্ব।